শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

অস্থিত্ব সংকটে বাঙ্গালী হিন্দুরা



 

: মতিলাল দেবরায় :

বাংলাদেশ থেকে পারিবারিক ভিসা নিয়ে আমেরিকায় আসা বাঙ্গালী হিন্দুদের পরবর্তী প্রজন্মের বাঙ্গালী পরিচয় হারিয়ে যাবে। তাহারা তখন প্রবাসে এক ভূমিহীন, গৃহহীন এক উদ্বাস্তু জনগুষ্টিতে পরিনত হবে, বাংলাদেশ থেকে আগত অধিকাংশ বাঙ্গালী হিন্দুরা নিজের পরিবারের সকল সদস্যদের সময় উপযোগী কোন দিক নির্দেশনা দিতে পারেনা, তাই পরিবারের সদস্যরা বিভ্রান্ত হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন ।
কয়েক বছরের মধ্যে নিউইয়র্কে, টরেনটো,মনট্রিল, কেলগেরি, হিউস্টোন, মিশিগান, সিকাগো, নিউজার্সি ইত্যাদি এলাকায় বসবাসরত অনেক বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারের মেয়েদেরকে অবাঙ্গালী ভারতীয় হিন্ধি, আসামি, পাঞ্জাবি ভাষাবাসি, ইউটাহা বাসি শ্বেতাঙ্গ হিন্দু খ্রিষ্টান,পাঞ্জাবী শিখ,চাইনিজ,ইউটাহা সহ বহুজাতিক ছেলেদের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন ।ধর্ম বর্ণ বংশ ও জাতীয়তা না জেনে শুনে শুধু মাত্র অপরিপক্ষ ছেলে মেয়েদের কথায় তাদের কে তাদের বংশের মুখে চুন কালি দিয়ে এবং গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে নিজের মেয়েকে ধর্মান্তরিত হতে সহযোগিতা করে তাহার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নকে চিরতরে ধংস করে দিলেন,নিজের হাতে নিজের উরস জাতক মেয়ের নিজের বংশের চৌদ্দ পুরুষের সাথে যে দুরত্ব সৃষ্ট করলেন তাহা ক্ষমার অযোগ্য পাপ।একবার ও কি ভেবে দেখেছেন সেই স্প্যানিশ ভাষা বাসি যে মেয়েকে অপরিপক্ষ ছেলের কথায় বিয়ে করে ঘরে তূলেছেন তাহার সামাজিক অবস্থান কি,তাহার বংশ পরিচয় কি, তাহারা কি এসট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্র বিশ্বাস করে তাহারা কোন ধর্মের অনুসারি, তাহাদের পূর্ব পুরুষরা কোন দেশে থেকে এসেছেন,তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা কি ছিল তা না জেনে ছেলে মেয়েদের আবেগ তাড়িত কথায় বিশ্বাস করে তাদের কে বিবাহ দিতে বাধ্য হন।যে মা বাবাদের আর্থিক সক্ষমতা কম সে ক্ষেত্রে ছেলে মেয়েরা তাদের পক্ষে মা বাবাকে প্রভাবিত করতে সহজ হয় ।বর্তমানে অনেক বাঙ্গালী হিন্দু পরিবার প্রস্তত হয়ে আছেন তাদের ছেলে মেয়ে্দের কে অবাঙ্গালী ভারতীয় অথবা এ দেশীয় শ্বেতাঙ্গ পরিবারের ছেলে মেয়েদের কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য,তার কারন ছেলে মেয়েরা অনেক আগে থেকেই বহু জাতিক মানুষের দেশ আমেরিকার ছেলে মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাই তাহারা নিজের এবং পরিবারের স্বার্থে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন। বাঙ্গালী হিন্দু অভিবাবক গন নিজেদের ছেলে মেয়েদের কে সঠিক সময়ে জীবন গঠন এবং প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতে পারেন না, তাছাড়া অধিকাংশ নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙ্গালী হিন্দুদের বাংলাদেশে আর্থিক সচ্চলতা না থাকায় এই দেশে যখন ভিসা নিয়ে আসেন তখন তাদের এ দেশে, লেখা পড়া চাকুরী করতে, যে কি রকমের যোগ্যতার প্রয়োজন তা সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকেন না তাই তাহারা তখন কোন প্রস্তুতি ছাড়াই এই দেশে চলে আসেন, যাহারা স্পন্সর করেন তাদের অধিকাংশ শিক্ষাগত যোগ্যতা,ও দক্ষতা বিহীন,এমন কি কোথায় চাকুরী পাওয়া যায় তাহারা তাও জানেন না।এ সম্পর্কে নুতন ইমিগ্রেনট হয়ে আসা পরিবারবর্গ নিয়ে নিউইয়র্কে এসে প্রথমেই থাকা খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় খুব অমানবিক জীবন যাপন করেন।যুবকরা গাড়ি চালানোকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন যাহারা গাড়ি চালাতে চান না তাদের অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট এর বাছ বয়ের(খাওয়ার পর টেবিলের ময়লা পরিষ্কার করা)চাকরিতে যোগ দেন ।বেসরকারি বা সরকারী চাকুরীর অভাব নাই কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলতে না পারায় তাহারা সে চাকুরী করতে পারেন না।অধিকাংশ বাঙ্গালী হিন্দুরা এদেশে এসে স্পন্সরের বাসায় পরিবার পরিজন নিয়ে উঠেন কিন্তু নিউ ইয়র্ক শহরে কেউ একটি পরিবারকে চার দিনের বেশি সময় রাখতে পারেন না, অতিরিক্ত কক্ষ না থাকার কারনে,তাই অল্প সময়ের মধ্যে আলাদা ঘর ভাড়া নিতে হয়।আর্থিক কারনে পরিবারের স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কেই কোন না কোন চাকুরী করতে হয়। ধীরে ধীরে পরিবারের ছেলে মেয়েরা বড় হতে থাকে স্কুলে যায় মা বাবারা একেবারে সময় দিতে পারেন না তাই অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা এই বহুজাতিক সমাজের ছেলে মেয়েদের প্রকাশ্য চলা ফেরা দেখে তাহারা ও এই বহু জাতিক সমাজের বৈশিষ্ট এবং কালচারে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।তখন ধীরে ধীরে মা বাবারা সন্তানদের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন এবং পরবর্তীতে মা বাবারা বাধ্য হয়ে বহুজাতিক ছেলে বা মেয়ের কাছে নিজের সন্তানকে তূলে দেন।মনে করেন নিউইয়র্কের বাঙ্গালী পরিবারে বাবা মা তাদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে যে কারনেই হউক মেয়েকে গুজরাটি/ভারতীয় হিন্ধি ভাষাবাসি একটি ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন মেয়ে তার বংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভবিষ্যতে ভারতে চলে গেল তার পরিচয় গুজরাটি হয়ে গেল সেই মেয়ের পক্ষে কোন দিন বিভিন্ন বাস্তবতার কারনে আর বাপের বাড়ীর সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব হবেনা,তাই বাপের বাড়ীর সাথে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যায়।তারপর আসেন পরিবারের ছেলেটি বিস্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক স্প্যানিশ/সাদা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাকে ও স্প্যানিশ মেয়ে বিয়ে করাতে বাধ্য হন। তাদের সন্তানরা আর বাঙ্গালী হিন্দু হয়ে বাংলাদেশে যাবেনা, কিছু দিন পর দেখা গেল পরিবারের বাবা হার্ট এটাক হয়ে মারা গেলেন, তারপর তাহার স্ত্রী হয়ত দুই চার বছর বাচার পর পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।স্প্যানিশ মেয়েকে বিয়ে করার পর ছেলে মেয়ের বাপের বাড়ি কলম্বিয়া অথবা ইকুয়েডর বছরে দুই বার করে যাওয়া শুরু করলেন সম্পর্ক আর পুক্ত হল, তাদের ঘর আলো করে পর পর দুইটি ফোট ফোটে পুত্র সন্তান জন্ম নিল তারপর কলাম্বিয়ান মেয়েকে বিবাহ করার পর আর কি কোন দিন বাপের গ্রাম্রের বাড়িতে ২০ ঘণ্টা বিমানে চরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে যাবেন কখন ও না, এই ভাবে জন্ম ভিটা বাপের বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে আর অন্য দিকে তাহার সন্তানেরা বড় হলে তাহারা মা যদি খৃস্টীয় ধর্মের অনুসারি হন তা হলে ছেলে মেয়েরা ও খৃস্টীয় ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মায়ের সাথে প্রতি রবিবার গির্জায় প্রার্থনায় বসবে আর আর কোন উপায় না দেখে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে তিনি ও গির্জায় যেতে বাধ্য হবেন।এই ভাবে এই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারের কোন চিহ্ন থাকবেনা ।এখানেই শেষ নয় আপনার বংশের বাংলাদেশে যাহারা বসবাস করেন তাহা ও নানা রকম সামাজিক অপবাদ শুনতে হবে।যে গুজরাটি, পাঞ্জাবি(শিখ) স্বেতাঙ্গদের কাছে জীবন ও ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের পূর্বেই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েরা অভিভাবকদের উদাসিনতা ও সঠিক সময় সঠিক জ্ঞান না পাওয়ার কারনে এবং তাদেরকে সঠিক গারজিয়ানশিপ দিতে না পারার বাংলাদেশী ছেলে মেয়েরা যখন হাই স্কুলে পড়া শুনা শুরু করে তখন তাহারা বহু জাতিক ছেলে মেয়েদের অবাদ মেলামিশা দেখে তখন তাদের মধ্যে অবাদ মেলামেশার আকাংখ্যা জাগ্রত হয়।মা বাবাদের অজান্তে একজন ছেলের সাথে যদি একটি মেয়ে প্রথম প্রেমে পড়ে যায় এবং সেই প্রেম যদি হয় উভয়ের প্রথম প্রেম এবং ছেলে মেয়ে যদি বাবা মাদের থেকে অনেক দূরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে হল বা হোস্টেল এ থেকে পড়া শুনা করে এবং হবু প্রেমিক ও যদি সেই বিস্ববিদ্যালয়ে পড়া শুনা করে, তা হলে তোঁ আর কথা নাই, প্রথম্ প্রথম কলেজ বিস্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে এক সাথে নাস্তা খাওয়া, ক্লাস শেষে খাতা বা নোট আদান প্রদান,তার পর একসাথে বড় কোন রেস্টুরেন্ট খাওয়া দাওয়া এবং পরবর্তীতে এক সাথে সিনেমা দেখা । তার পর কলজে এবং বিস্ববিদ্যালয়ে পিকনিকে একসাথে যাওয়া ঘুরে বেড়ান ইত্যাদি যৌথ কর্মসূচী মাস দুই এক চলার পর উভয় পক্ষই খুব কাচাকাছি চলে যান পরবর্তীতে তাদের মধ্যে যৌন তারনা ব্রিদ্বি পায় তখন তাহারা এক সাথে থাকা শুরু করে। তখন ছেলে মেয়েরা পরস্পরের প্রতি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে,তখন তাহারা চোখে কেউ কে আর দেখেতে পায়না ।তখন তাদের মধ্যে ধর্ম জাতিবেদ কোন কিছুকেই বাধা হিসাবে মনে করেনা ।তখন মা বাবাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এই রকম বাঙ্গালী হিন্দু ঘরের মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব হচ্ছেন। যে ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন তার সাথে জীবনের প্রথম পর্যায়ে তাদের উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভাল থাকবে কিন্ত দুই জন ছেলে মেয়ে দুই সামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠা দুই জনের আচার আচরন,কালচার,ধর্মীয় রিতি নিতি ভাষার ভিন্নতা, দুই দেশে দুই জন ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন,তাই তাদের চাওয়া ও পাওয়ার মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে আপনি আপনার ছেলে বা মেয়েকে বহু জাতিক সমাজে বেড়ে উঠা ছেলে বা মেয়েকে বিবাহ দিয়ে খুব ভাল করেছেন আসলে কিন্ত শুধু মাত্র গুজরাটি ছেলেদের কাছে যে সকল মেয়েদের কে বিয়ে দিয়েছেন সেই বিবাহ বন্ধন শতকরা আশি ভাগ বিবাহ টিকসই থাকবে বলে ধারনা করা যায় কিন্তু যাহারা অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ, পাঞ্জাবী শিখ,পাঞ্জাবী হিন্দু, স্প্যানিশ, বা ভারতীয় হিন্ধি ভাষাবাসিদের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন তাদের সংসার হয়ত ভেঙ্গে ও যেতে পারে। আপনার পরবর্তী প্রজন্ম গুজরাটি বা অন্য কোন সম্প্রদায়ের প্রজন্মের কাছে হারিয়ে গেল এই ভাবে যাহারা গুজরাটি আর স্প্যানিশ দের কাছে বিবাহ দিয়ে নিজের সন্তানকে নিজের হাতে বহুজাতিক কাছে বিয়ে দিয়ে নিজের পরবর্তী প্রজন্মকে অস্থিত্ব হীন এবং পরিচয় হীন করে ধীরে ধীরে বাঙ্গালী হিন্দুদের কে পরবর্তী প্রজম্নের কাছে এক পরিচয় হীন জাতীতে পরিনত করতে সহায়তা করে গেলেন ইতিহাস কিন্তু কেউ কে ক্ষমা করবে না ।

লেখক : মতিলাল দেবরায়,  আমেরিকা প্রবাসী