শনিবার, ৪ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল : কমলগঞ্জের হাজার বিঘা জমির বোরো ফসল পানির নিচে



2017-04-02--15_52_57

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন:

ত দুদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৯টি গ্রামের প্রায় এক হাজার বিঘা জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। লাঘাটা নদী ভরাট ও ঝোপজঙ্গলে ভরপুর থাকায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধ পানিতে ওই এলাকার বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলে গরিব কৃষকরা আহাজারি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা, হালাবাদি, মাইজগাঁও, পতনঊষার, চন্দ্রপুর গ্রাম, শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগাঁও, কেচুলোটি, ভাদাইর দেউল গ্রামের আংশিক ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রূপষপুর গ্রামের নিম্নাঞ্চল এলাকার বোরো আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উজান থেকে বৃষ্টির পানি নামতে থাকায় কেওলার হাওর এলাকায় পানি বাড়ছে। ফলে আবাদি বোরো ফসলি জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এবং থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ধূপাটিলা গ্রামের সেলিম মিয়া, শেলি বেগম, পতনঊষারের তোয়াবুর রহমান, রুপষপুরের মোজাহিদ আলী ও লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস) লিমিটেডের সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, আকস্মিক বৃষ্টির ঢলে নিম্নাঞ্চলে বোরো নির্ভরশীল কৃষকদের আবাদি প্রায় ৫০ হেক্টর জমি সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে। ফলে গরিব কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আরো বলেন, আউশ ও আমন মৌসুমে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় এসব এলাকার কৃষকরা বোরো নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। এখন বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পতনঊষার ইউনিয়নের শেরওয়ান আলী ও তোয়াবুর রহমান জানান, কমলগঞ্জের পতনঊষার ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদী ভরাট ও ঝোপজঙ্গলে ভরপুর হয়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল দিয়ে মনু নদীতে দ্রুত পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে কেওলার হাওরকে কেন্দ্র করে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। তারা বলেন, পতনঊষার ও কামারচাক এলাকা দিয়ে লাঘাটা নদী সংস্কার ও ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করলে ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হবে এবং কৃষকরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন না। এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। তবে পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। তা ছাড়া লাঘাটা নদী সংস্কারের জন্য এলজিইডির পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জে তলিয়ে গেছে হাওরের ফসল
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের শত শত একর বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও হাওরের আরো ফসল তলিয়ে যাবার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টিপাতে খরচার হাওরের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০০ হেক্টর ইরি বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ধান তলিয়ে গেছে। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওর পার্শ্ববর্তী নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষার বাঁধগুলো সময়মতো নির্মাণ ও মেরামত শেষ করতে না পারায় এলাকার কৃষকসহ সর্বমহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুকশেদুল হক বলেন, উপজেলায় হাওর এলাকায় ৭৭৫০ হেক্টর জমিতে ও হাওর বহির্ভূত ৩৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ইরি চাষাবাদ করা হয়েছিল। এ বছর প্রথম দিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ফসলের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক বৈরিতার ফলে কৃষকের ফসলহানি ঘটছে।