শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

রাখালনৃত্যের মধ্য দিয়ে কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরী মহারাসলীলা ও মেলা শুরু



Exif_JPEG_420
কমলকুঁড়ি রিপোর্ট ।।
“দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ” বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের  বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব “রাসলীলা” কঠোর নিরাপত্তা ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাখালনৃত্যের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের ১৭৩ তম ও আদমপুরের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গণে ৩০ তম ও শ্রীমধুমঙ্গল শর্ম্মার মন্ডপে প্রথমবারের মত মনিপুরী মী-তৈ সম্প্রদায়ের মহারাসোৎসব শুরু হয়েছে। তুমুল হৈ-চৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল এবং শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে ঘিরেই আজকের দিনটি বছরের অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসবে  কমলগঞ্জ উপজেলাবাসীর জীবনে। বুধবার সকাল থেকে রাসোৎসব দেখতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপ ও আদমপুরের দুটি মণ্ডপে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চে অনু্ষ্িঠত হয়েছে রাখাল নৃত্য। রাখাল নৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধাকৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। নিজস্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে মণিপুরী তরুণ-তরুণীরা এতে অংশ নেন। সন্ধ্যায় গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে শুরু হবে মণিপুরী নৃত্যের ধ্রুপদ ভঙ্গিমায় রাধাকৃষ্ণের রাসনৃত্য।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব এবং শ্রীমতি রাধিকার সঙ্গে প্রেমের কাহিনী নিয়ে রাসোৎসবের আয়োজন। মাধবপুরের শিববাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের তিনটি মণ্ডপসহ পুরো এলাকা সেজেছে বর্ণিল সাজে।
রাসলীলা উপলক্ষে কমলগঞ্জের তিনটি স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় খৈ, মুড়ি, বাতাসা, ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ও প্রসাধনী, শ্রীকৃষ্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ছবিসহ বাহারি পণ্য শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির সামনে বসেছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বইপত্রের কয়েকটি স্টল।
মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, মাধবপুর জোড়ামন্ডপে রাসোৎসব  সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্প সমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।
স্কুল শিক্ষিকা অঞ্জনা সিন্হা বলেন, বংশ পরম্পরায় নান্দনিকতার পূজারী মণিপুরীদের মেলবন্ধন এই রাস উৎসব। এটি এখন জাতিধর্ম নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
মাধবপুর মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুরারীচাঁদ সিংহ জানান, এখানে সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসবে যোগ দিতে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী এখানে এসেছেন।
সাদা কাগজের নকশায় নিপুন কারু কাজে সজ্জিত করা হয় মন্ডপগুলো। রাসোৎসব উপলে বুধবার মহারাত্রির জন্য হাজার হাজার মানুষের মিলনতীর্থ পরিনত হয় মাধবপুর জোড়া মন্ডপ আর আদমপুরের মন্ডপগুলো। মন্ডপে মনিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুন নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও মেতে উঠে একদিনের এই আনন্দে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা দেশের বিভিন্ন স্থান হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষের পদচারনায় বুধবার সকাল থেকে মুখরিত হয়ে উঠে মণিপুরী পল্লীর এ দুটি এলাকা। বুধবার সকাল ১১টা থেকে রাখাল নৃত্যের (গোষ্ঠলীলা) মধ্যদিয়ে কমলগঞ্জের তিনটি মন্ডপে রাসোৎসব শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গুণীজন সংবর্ধনা ও রাত ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত চলবে শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলানুসরণ।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে গৌড়িয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী (বিষ্ণুপ্রিয়া) মণিপুরী সম্প্রদায়ের ১৭৩ তম শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরন উৎসব উপলক্ষে গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।